Wednesday, 6 March 2019

অণু গল্প #প্রতিদান

# প্রতিদান
রাত আটটা বাজে।
আমি আমার শোবার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। যদিও কাগজে কলমে এখনো শীতকাল, তারপরেও যথেষ্ট গরম পড়েছে। ফ্যান ছাড়লে লাগে ঠান্ডা, আবার বন্ধ করলে গরম।
বেশ বিব্রতকর একটা অবস্থা।
কয়েকবার খাট থেকে উঠে ফ্যান ছেড়ে আবার বন্ধ করেছি।
ব্যাপারটা এখন বেশ বিরক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
এখন ফ্যান বন্ধ করে, সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বসে আছি। দেখি কি হয়!
এই ‘কি হয়’ ব্যাপারটা দেখতে গিয়ে এবার আরেক ঝামেলা পাকালাম। কোথা থেকে যেন একগাদা মশা এসে জুটেছে।
ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়া থাকলে, এরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা। তবে ফ্যান বন্ধ করা মাত্রই এরা ‘ঈদ মোবারক’ বলে ক্রমাগত কামড়াতে থাকে।
এ কামড় শুধু অল্পতেই থাকেনা। এর রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ। বেশ বিচ্ছিরি রকমের রেশ!
কামড়ানোর যায়গাটা সমানে চুলকায়।
আরাম করে চুলকাচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে।
এরই মাঝে এশার আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসলো। নামাযে যাবো।
পাশের মসজিদে তবলীগ জামাত এসেছে। নামাযের শেষে খানিকক্ষণ মুসল্লীদের সাথে কাটানোর ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে আছে এদের সাথেই চিল্লায় যাওয়ার।
এই ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগেও মনের শান্তির একমাত্র জায়গা হিসাবে মসজিদের বিকল্প আমি পাইনা। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা বা ইবাদতের চেয়ে শান্তির আর কি ই বা থাকতে পারে!
এই মসজিদটা দুইতলায় । নিচলায় স্থানীয় থানা আর দ্বিতীয় তলায় মসজিদ।
সেই রাতে থানায় একটা লাশ আসে । বেওয়ারিশ রোড এক্সিডেন্টের লাশ। প্রায় দুইদিন হয়ে গেলেও কেউ আসেনি লাশটার খোজ নিতে।
পোষ্টমর্টেম শেষে হাসপাতাল থেকে বার বার চাপ দেয়া হচ্ছিলো, লাশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।
এভাবে তো লাশ ফেলে রাখা যায় না, তাই জামাতের যে আমির থাকেন, তিনি পুলিশকে অনুরোধ করে বলেন, চলুন লাশটাকে আমরা গোসল দেই আর জানাযা পড়িয়ে কবর দেই।
পুলিশও মনে হয় এ কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
আমির সাহেব, আমাকে আর দুইজনকে নিয়ে লাশটাকে ঠিক মতো গোসল করিয়ে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন দিলেন।
কাজটা করতে পেরে আমাদের অনেক অনেক ভালো লাগছিলো।
এর কিছুদিন পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাবলীগের লোকজন, অন্য মসজিদে চিল্লায় চলে যায়। কলেজ বন্ধ, তাই আমিও চললাম তাদের সাথে।
আমরা যে মসজিদে গিয়েছিলাম, সেটা এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে। সেই মসজিদ থেকে বাজার বেশ দূরে ছিলো। বাজারে যেতে হলো কম হলেও ঘন্টা তিনেক সময় লাগে।
পথে একটা ছোট নদী পার হয়ে পরে আবার ভ্যান গাড়ি করে যাওয়া লাগে। অনেক অনেক গহীন এক গ্রাম।
এমনই এক রাতের বেলা জামাতের আমির সাহেবের শরীর হঠাৎ বেশ খারাপ হয়ে যায়। অবস্থা ধীরে ধীরে বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।
শ্বাসকষ্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করায়, তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। সবাই বুঝছিলো দ্রুত ব্যাবস্থা না নিলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো যাবে না।
তবে এত রাতে এখানে ডাক্তার বা ভ্যান গাড়ি কোথায় পাবে? আর পাওয়া গেলেও হয়তো সেটা আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে।
মুরুব্বীরা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
ওদের মধ্য থেকে আমি, আমার ভাই নিসারকে সাথে নিয়ে বের হলাম ভ্যান খুঁজতে। কেননা নিসার অন্যদের তুলনায় ছিলো দারুন সাহসী। যা থাকে কপালে, আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা বের হলাম।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাছাড়া বেশ ঠান্ডা। শীতের কাপড়েও ঠান্ডা কাটছে না।
আশপাশের গাছপালাগুলোও কেমন যেন ঝিম মেরে রয়েছে। অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর নিজেদের পায়ের খশখশ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের চিন্তা হলো একেতো এতো রাত, তার উপর ঠান্ডার জন্য ভ্যান তো পাওয়া যাবে না। তাছাড়া এ গ্রামে কার বাড়িতে ভ্যান আছে সেটাও আমরা জানি না।
একথা বলতে বলতে ফিরে যাব কিনা সেটাও ভাবছিলাম দুজন।
এমন সময় কিছু দুরে স্থানীয় একটা দোকানের পাশে একটা ভ্যান দেখতে পেলাম।
ভ্যান্ টা দাড়িয়ে আছে। ভ্যানের দেখা পেয়ে বেশ খুশী খুশী লাগছিলো, তবে কাছেধারে ভ্যান চালক কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
গ্রামের এই দিকটায় ঠান্ডার মাত্রাটা মনে হয় একটু বেশী। রীতিমত কাঁপুনি ধরে যায়।
কেউ আছেন? বলে ডাক দিলাম আমরা। আমাদের ডাক শুনেই মনে হয় দোকানের পিছন দিকের একটা অন্ধকার ঝোপের কাছ থেকে একজন উঠে এলেন।
লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। পুরো শরীর ঢাকা ছিলো চাদর দিয়ে ।
উনার মুখ ও তাই দেখা যাচ্ছিলো না। আমাদের কথা শুনে লোকটা শুধু বললো, চলুন।
আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতেই খেয়াল করলাম বাজার চলে এসেছে। আর কি আশ্চর্য এত দ্রুত বাজারে চলে এলাম! তাছাড়া এত রাতেও এই বাজারের প্রায় সব দোকানই খোলা।
আশে পাশে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সবারই উচ্চতা প্রায় ছয় ফিটের উপরে হবে।
ভ্যান চালক আমাদের ভ্যানেই বসতে বলে, ঔষধের দোকান থেকে একটা ঔষধ নিয়ে আসলেন।
ঔষধটা আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, ভ্যানে শক্ত করে বসতে। অন্ধকারে ভ্যান চলছে। ভ্যানের গতিও বেশ।
এই আঁধারে কোন আলো না জ্বালিয়ে যেখানে রাস্তা দ্যাখাই মুশকিল, সেখানে সে কিভাবে ভ্যান চালাচ্ছে, আশ্চর্য ব্যাপার!
আমরা আর কিছু চিন্তা করতে পারলাম না।
হঠাৎ ভ্যান থেমে গেলো।
ভ্যান চালক, আমাদের বললো, দ্রুত এই ঔষধটা রোগীকে খাইয়ে দিন।
আর আগামীকাল সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, আশা করি আল্লাহর রহমতে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ঔষধ নিয়ে আমার সাথে থাকা নিসার দ্রুত মসজিদে চলে গেলো।
আমি ভাবছি অন্য কথা, যেখানে বাজারে যেতে আমাদের একটা নদী পার হওয়া লাগে, সেখানে এতো জলদি কিভাবে আমরা আসলাম? কাছাকাছি এত সুন্দর বাজার থাকতে আমরা তাহলে শুধুশুধুই এত কষ্ট করতাম এতদিন?
আমি যখন ভ্যান চালককে ভাড়া দিতে গেলাম, তখন লোকটা ভাড়া নিতে চাইলো না।
লোকটা ভ্যান ঘুড়িয়ে শুধু বললেন,
'আপনারা আমার জন্য যা করেছেন সেটা কয়জন করে? আমি কোন ভাড়া নিবো না ভাই। আল্লাহ হাফিজ' বলে লোকটা যখন মুখ ফিরিয়ে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন মসজিদের কেরোসিনের হ্যারিকেনের হালকা আলোয় চেহারাটা দেখলাম।
কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো।
কোথায় যেন দেখেছি। ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।
দ্বিধান্বিত চিন্তায় মসজিদে ঢুকছি, হঠাৎ মনে পড়লো, আরে এই লোকতো সেই লোক, যার গোসল দিয়ে, জানাজার নামাজ আমরা পড়িয়েছিলাম।
এক ঝটকায় পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই।
না ভ্যান, না কোন মানুষ!
লেখাঃ তৌফিক মিথুন
  নিরু এই নিরু এই দিকে আয় তো। (আমি)
---কী হল বলেন। (নিরুপমা)
---এখানে একটা ফাইল ছিল, তুই দেখেছিস???
---ডয়ারে দেখেন, কোন জিনিস তো আপনি
ঠিক করে রাখবেন না।প্রতিদিন ঘর গুছিয়ে
রাখি, পরের দিন আবার সব এলোমেলো।
জানেন সারা দিন বাসার এত কাজ আমি আর
চাচি কি করে করি????
---যখন বিয়ে করে বউ আনব তখন আর তোকে বা
মাকে আর করতে হবে না। সেই সব করবে।
---হা হা হা, আপনার মতন অগোছাল ছেলেকে
মেয়ে দিবে কে???? সারা দিন বউয়ের ঝারির
উপর দিয়ে যেতে হবে আপনাকে।
---বেশি হাসিস না। দেখিশ খুব সুন্দর একটা
মেয়েকে বিয়ে করব, তোর মতন শাকচুন্নি না।
আমার বউ হবে খুব সুন্দর। যে দেখবে অবাক হয়ে
তাকিয়ে থাকবে।
---কই থেকে এক পেত্নী ধরে আনবেন তাঁর নেই
ঠিক। আবার বলে লোকে নাকী তাকিয়ে
থাকবে……
---সে দেখা যাবে। এখন তুই যা দেখ মায়ের
নাশতা তৈরি হল কি না।
---হুম দেখছি।
আমি রাশেদ, বাবা মায়ের একমাত সন্তান। আর
ও নিরুপমা, সবাই নিরু বলেই ডাকি। আমার ছোট
চাচার মেয়ে। একটা দুর্ঘটনায় চাচা চাচি
মারা যান তখন ওর বয়স মাত্র ৮ বছর।
এর পর থেকে নিরু আমাদের এখানেই মানুষ, ওর
নানা নানী অবশ্যই ওকে নিয়ে যেতে
চেয়েছিল। বাবা মা দেয় নি। বলেছে
আমাদের মেয়ে আমাদের কাছেই থাকবে।
ওর নানা মাঝে মাঝে এসে দেখে যান, অনেক
ভাল মানুষ। নিরুও যায়। মামা মামি ও মামাত
ভাই বোন আর নানীর সাথে সময় কাটাতে।
নানী অসুস্থ বলেই আর আসেন না। নিরুই গিয়ে
দেখে আসে।
---নাশতা রেডি, চাচি ডাকছে।(নিরুপমা)
---তুই যা আমি আসছি।(আমি)
রেডি হয়ে নাশতা করতে এলাম। বাবা মা নিরু
আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি আসতেই সবাই
খেতে শুরু করল।
---কিরে নিরু তোর পড়াশোনা কেমন চলছে
মা। (বাবা)
ও নিরু পড়াশোনায় খুব ভাল তাই বাবা ওকে যত
দুর চাই পড়ার অনুমতি দিয়েছে। নিরু এবার
অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
---জি চাচা খুব ভাল চলছে তোমাদের দোয়ায়।
(নিরু)
---রাশেদ তোর অফিস।
---জি বাবা খুব ভাল। (আমি)
পড়াশোনা শেষ করে এই মাস দুয়েক হল
চাকরিতে ঢুকেছি।
---যে কাজ করবা সবসময় মন দিয়ে করবা, মনে
রেখ কাজকে সন্মান করলে কাওকে তোশামোদ
করতে হবে না।
---জি বাবা।
---যাওয়ার সময় নিরুকে কলেজে নামিয়ে
দিয়ে যাবে।
---জি বাবা, সেটা তো রোজই করি।
---তা কর, তারপরো।
নাশতা করে বের হলাম অফিসের উদ্দশ্য,
বাইকের পেছনে নিরু।
---আচ্ছা তোর একা ফিরতে ভয় করে না।(আমি)
---কেন নিজের এলাকাই ভয় কিসের???(নিরু)
---দেখছিস তো চারিদিকে কি হচ্ছে???
---হুম হচ্ছে, আমি আল্লাহর ভয়ে ভিত এই ভয়ে
না। আমি যে করমের পর্দা করি তাতে পর্দার
আড়ালে যে যুবতি না বুড়ি তা তো কেও
বুঝতেই পারে না। তাই ভয়টা নেই। তাঁরপরো
একটু দেখেশুনে চলাচল করি…..
---তা ঠিক, আমিই মাঝে মাঝে গুলিয়ে
ফেলি, দেখ এই যুগের মেয়েরা কি ধরনের পর্দা
করে??? এইটা ইসলামের নির্দেশিত সেই পর্দা
যা একজন নারীকে হেফাজত করতে সক্ষম। আজ
কাল সবই ফ্যাসান হয়ে গেছেরে।
---না তা নয়, আর তা নয় বলেই আজ আমাদের
সমাজের এই অবস্থা।
---হুম হয়ছে, তোর কলেজে এসে পরছি। যা মন
দিয়ে ক্লাস করবি।
---সাবধানে যায়েন।
এরপর অফিসে চলে এলাম। কেবিনে বসে কাজ
করছি সাহেদ ভাই এসে বললেন
---কী ভাই বাইকে কাকে নিয়ে এলেন??? খুব
তো বলেন। এখন তো দেখি তলে তলে সবই
করেন…..(সাহেদ ভাই, সহ কর্মী)
---কি যে বলেন, মাইন্ড চেন্জ করেন। সহাইকেই
কী নিজের মতন ভাবেন?????? ও আমার ছোট
চাচার মেয়ে। আর রোজই তো ওকে সাথে
নিয়েই আসি। ওর কলেজে নামিয়ে দিয়ে
অফিসে আসি। (আমি)
কথাটা বলতেই সাহেদ ভায়ের মুখটা শুকিয়ে
গেলো। ফাটা বেলুনের মতম হয়ে গেলো
মুখটা……
আর কিছু না বলে তিনি চলে গেলেন। এই ধরনের
কিছু মানুষের জন্যই আজকাল আপন ভাই বোন
রিকসা চড়তে চাইনা। এরা একটা ছেলে ও
একটা মেয়েকে একসাথে দেখলেই লাভার
ভাবতে শুরু করে। ওরা যে ভাই বোনও হতে
পারে সেই চিন্তা কখনই মাথায় রাখে না।
এরা ঠিকই অন্যর বোনের সাথে প্রেম করবে,
কিন্তু নিজের বোন কাওকে ভালবাসলেই সব
দোষ ঐ ছেলের… আরে এক হাতে কী তালি
বাঁজে??????
সারাদিন হাতটা উচু করে রাখত দেখি কী করে
শব্দ হয়?????
য়খন এক হাত দিয়ে অন্য হাতকে আঘাত করা হয়
তখনই শব্দ হবে…..
নিজের কাজে মন দিলাম, আজ দুটো ফাইল সম্পুর্ন
করতে হবে। আজ জমা না দিলে ঝাড়ি খেতে
হবে।
খুব ব্যাস্ততাই কাটছে আজকের দিনটা। দুপুরে
নামাজ পড়ে এসে কোনরকমে লান্স করেই আবার
কাজে বসলাম।
যাক সময় মতন কাজ শেষ। যাই স্যারের কাছে
জমা দিয়ে আসি।
---আসসালামুআলাইকুম । আসব স্যার????? (আমি)
---ওয়ালাইকুমআসসালাম, আরে রাশেদ সাহেব
আসুন।, তা কি খবর বলুন??? (বস)
---ফাইল দুইটা জমা দিতে এলাম স্যার।
---তা দাঁড়িয়ে কেন, বসুন। কই দেখি ফাইল।
ফাইল দুটি বাড়িয়ে দিলাম। অনেক খন হল স্যার
মন দিয়ে দেখছেন। স্যারের মুখ দেখে তো
কিছুই বোঝা যাচ্ছে নি, কি যে হয়। অনেক ভার
ভার লাগছে স্যারের মুখটা।
---গুড, খুব ভাল কাজ করেছ। এমন কাজ করলে খুব
তারাতারি এগিয়ে যাবে। অনেক সুন্দর ও
পরিস্কার আপনার কাজগুলো…….
---ধন্যবাদ স্যার। তাহলে এখন আসি স্যার???
---আসুন।
স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম, স্যারের
কথাটা শুনে খুব খুশি লাগছে। আজ আর হাতে
কোন কাজ নেই। ছুটি হতেও বেশি সময় নেই যাই
বাড়ি যায়।
কিছু মিষ্টি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
---কিরে তোর হাতে মিষ্টি কিসের??? (মা)
---আগে মুখে নাও বলছি। (আমি)
বলেই মায়ের মুখে মিষ্টি পুরে দিলাম।
---এবার বল।
---আজ স্যার আমার অনেক প্রসংসা করছে। দুটো
ফাইল জমা দিলাম কোন ভুল নেই।
এই নাও বাবা ও নিরুকে দিও। আমি ফ্রেশ হতে
গেলাম।
---যা, আমি খাবার দিচ্ছি……
খাওয়াদাওয়া করে বের হলাম, এলাকার ভেতর
একটু ঘোরাঘুরি করি।
সন্ধায় মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়ি
ফিরলাম।
একটু ফেসবুকে যাব, কিন্তু ঘরে ল্যাপটপ নেই।
---নিরু আমার ল্যাপটপ নিয়েছিস??? (আমি)
---হুম, এই কাজটা করেই. দিচ্ছি…..(নিরু)
---আচ্ছা কর। পরে দিলেও চলবে।
মোবাইল নিয়ে গেম খেলতে লাগলাম। এশার
আযান হলে গিয়ে নামাজ পড়ে বাড়ি
ফিরলাম।
নিরু ল্যাপটপ রেখে গেছে তাই ল্যাপটপ নিয়ে
ফেসবুকিং করছি।
---চাচি খেতে ডাকছে। খাইতে আসেন। (নিরু)
---তুই যা আমি আসছি। (আমি)
কিছুখন পরে
---সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
---যা না আসছি বললাম তো।
---ও চাচি তোমার ছেলে আমাকে ধমক
দিচ্ছে।
---ঐ চাচির সেক্রেটারি তোরে কখন ধমক
দিলাম।
---কারেকসন, ঐটা আমার চাচি আপনের না।
আপনের মা।
---তুই যাবি।
দৌড়ে চলে গেলো, আমিও ল্যাপি সাউট
ডাউন দিয়ে খেতে গেলাম।
---রাশেদের মা রাশেদ তো এখন চাকরি করছে।
এবার ওর জন্য মেয়ে দেখি কি বল??? ( বাবা)
---হুম, আমিও সেই কথাই ভাবছি…. (মা)
---চাচা-চাচী তোমার এই আনরোমান্টিক,
মেজাজী ছেলেকে তে মেয়ে দিবে????? আর
যাকে বউ করে আনবে সার কপাল শেষ…(নিরু)
---ঐ তুই থামবি না দিব একটা???????(আমি)
---আমি তো ঠিকই বললাম, অগোছাল
আনরোমান্টিক একটা……
----এই তোরা থামবি???? যখনই দেখি লেগেই
আছিস। (মা)
---আত্নী স্বজনের ভেতর কোন ভাল মেয়ে
থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখ। বা তাদের খোঁজে
কোন মেয়ে আছে কি না।
কোন রকমে খাওয়া শেষ করে উঠে এলাম।
---আসব???
দরজাই টোকা দিয়ে
---আই, তোর আবার অনুমতি লাগে। বল কি বলবি।
---এই বিষয়টা একটু বুঝিয়ে দিন না।
---এখন কেন এই ক্যাবলা কান্তের কাছে
আসছিস???? পারব না যা।
---আরে তখন তো মজা করলা, আপনি কত ভাল,
স্মার্ট ভদ্র।
---পামে কাজ হবেনা, আমি বুঝিয়ে দিব না।
একটু পরে আবার ওসবই বলবি তুই…….
---আরে দিন না। আর বলব না তো…. এই কানে
ধরছি…..
---এর পরে এরকম করলে কিন্তু খবর আছে।
তারপর ওকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে
দিলাম।
রাতে ঘুমাতে যাব, পানির পিপাশা
পেয়েছে। তাই ডাইনিংএ যাব পানি খেতে।
বাবা মায়ের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়
শুনলাম বাবা মা আমার বিয়ে নিয়ে কথা
বলছে।
তাই একটু দারালাম।
---আচ্ছা নিরুকে রাশেদের সাথে বিয়ে
দিলে কেমন হয়। ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকল।
এমনিতেই বাবা মা ছাড়া আমাদের কাছে বড়
হয়ছে। মায়ায় জরিয়ে গেছে মেয়েটা। অন্যর
বাড়ি যাবে শুনলেই কেমন লাগে। ছোট
থেকেই কষ্ট করে মানুষ হয়ছে একা একা, পরের
বাড়ি গিয়ে যদি আবার কষ্ট পাই (মা)
---আমিও তাই ভাবছিলাম, কিন্তু তুমি আবার
কি বল না বল। এমনিতেই এতদিন আমাদের ঘরে
আছে মেয়েটা। নিজের মেয়ে ছাড়া অন্য
কিছু তো ভাবি নি। (বাবা)
---আমি আবার কি বলব??? সব সময় তুমি একটু বেশিই
ভাব। আমি কি কখন নিরুকে অন্যর মেয়ে
ভেবেছি। সবসময় নিজের মেয়ের মতই আদর করি।
---তা ঠিক তারপরো। কিন্তু রাশেদ আর নিরু কি
রাজি হবে এই বিয়েতে?????
---হবে না কেন। আমরা কি ওদের কম ভালবাসি,
আমরা কি ওদের খারাপ চাইছি কখনোআর না
কখনো চাইব??? আমাদের কথা শুনবে না????
বললেই হলো, আমাদের কোন অধিকার নেই
ওদের উপর?????
---দেখি কি হয়। ওরা রাজি হলেই সব ঝামেলা
শেষ।
---দেখ রাজি হবেই। ওরা তো কখনই আমাদের
অবাধ্য হয় নি। এবারো হবে না।
আর না দাড়িয়ে পানি খেয়ে এসে শুয়ে
পরলাম।
ঘরে এসে শুয়ে শুয়ে বাবা মায়ের বলা কথা
গুলোই ভাবছি। বাবা মা যা সিদ্ধান্ত নিবে
তাই হবে। না চাইতেই সব দিয়েছে। আর আল্লাহ
হয়ত তাই চায়, আল্লাহ না চাইলে যে কিছুই হবার
নয়।
আর না ভেবে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে নাশতা করছি সবাই।
বাবাই প্রসঙ্গটা আনল
---নিরু আমি আর তোর চাচি একটা সিদ্ধান্ত
নিয়েছি। আশাকরি তুই আপত্তি করবি না।
---আপনি নিদ্ধিধায় বলেন। ছোট কাল থেকে
আপনাদের কাছেই মানুষ হয়েছি। কোন কিছুর
অভাব বুঝিনি। না বাবা মায়ের না অন্য কিছুর।
আমার বিশ্বাস আছে এমন কোন সিদ্ধান্ত
আপনারা নিবেন না যাতে আমার ক্ষতি হয়।
---আমরা তোর সাথেই রাশেদের বিয়েটা
দিতে চাই। অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে পর করতে
চাই না।
---আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমার
মনে হয় অনেক ভেবেই নিয়েছেন। আরনারা যা
বলবেন তাই হবে।
---রাশেদ তোর কি আপত্তি আছে এই
বিয়েতে????
---তোমাদের সিদ্ধান্তের উপর আমার পুর্ন
আস্থা আছে। তোমাদের যেটা ভাল মনে হয়
তাই কর। আর নিরুর যেখানে আপত্তি নেই আমার
আপত্তি করার মানেই হয় না। বলেই খাবার
টেবিল থেকে উঠে আসলাময়
---আলহামদুলিল্লাহ । বলেছিলাম না
রাশেদের মা। ওরা আপত্তি করবে না। (বাবা)
---আপত্তি করলেই শুনছে কে। (মা)
---তাহলে আত্নীয় স্বজনকে দাওয়াত দেয়া শুরু
করি। আর মেজকে ডেকে দিনটা ফাইনাল করে
ফেলি কি বল???
---যা ভাল বুঝ কর। তবে আমার মেয়ের পড়া কিন্তু
বন্ধ হবে না।
---ও যত দুর চাই পড়বে। আপত্তি নেই।
রেডি হয়ে বাইরে নিরুর জন্য অপেক্ষা করছি।
ওকে কলেজে দিয়েই অফিসে যেতে হবে।
কিছুখন পরে নিরু এলো, আজ আর এসেই তোন কথা
বলল না, মাথাটা নিচু করে আছে।
মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে, এই প্রথম ও আমার সামনে
এত নিশ্চুপ……
বাইকে উঠে, কিরে উঠবি না দাঁড়িয়েই
থাকবি?????
কোন কথা না বলে চুপ করে বাইকে উঠে বসল।
জ আর পথের মাঝে কেও কারো সাথে কথা
বলিনি কোন বিষয়ে।
ওকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে
এলাম।
পরের দিন ও একই কোন কথা হল না বাড়িতেও
তেমন আর কথা হয় না। আমার সামনেও তেমন আর
আসে না, যতটা পারে আড়ালেই থাকে।
পরের দিন বাড়ি থেকে কিছু দুর যেতেই নিরুই
কথা শুরু করল
---আপনি আর আমার সাথে কথা বলছেন না
কেন??? সেদিন বিয়ের কাথা হবার সময় থেকেই
লক্ষ করছি।
বিয়েই তো হচ্ছে, আপনাকে ফাসি তো দিতে
চাইনি।
না আপনি মন থেকে রাজি না????
মেয়ে বলে কী???? নিজেও তো কথা বলে না,
আর আমার সামনেই তো আসে না কথা বলা তো
দুরের কথা। আর এখন নিজেই অভিযোগ তুলছে…..
---আসলে তোমাকে তো সেভাবে কখন দেখি
নি। আর….
---বাহ, “তুমি” এখন থেকেই। বলেই একটা হাসি
দিল, পেছনে বসে বলে দেখতে পারলাম না।
---এখনো কি তুই করেই বলব???
---না তা না, তবে চলেন এই কদিন আমরা প্রেম
করি।
---কি??? প্রেম। না এতদিন যখন করিনি তখন
এখনো না। বিয়ের পরেই।
---হুম পাশ।
---পাশ মানে???
----আপনাকে পরিক্ষা করলাম। যে প্রেমে
রাজি হন কি না।
---আমাকে আর পরিক্ষা করতে হবে না,
কলেজে এসে গেছি। ক্লাসে যান ম্যাডাম।
আর মন দিয়ে পড়বেন, বিয়ের আনন্দে যেন পড়া
ভুলে না যান।
বলেই চলে আসব তখনই
---এই শোনেন শোনেন। কিছু টাকা দিয়ে যান।
---টাকা কি করবা???
---বাহরে আমি বাড়ি যাবনা??? আর দুপুরের
চটপটি ফুসকার বিল কে মেটাবে শুনি???
---কেন বাবার থেকে নাও নি???
---বাবার থেকে নিব কেন??? এখন থেকে
আপনিই দিবেন।
---বাহ শুরু হয়ে গেছে। বিয়ের কথা হতেই
অধিকার খাটানো শুরু….
---হুম, অন্য কারো থেকে তো চাই নি। হবু
স্বামীর থেকে চেয়েছি। না হলে চাচাত
ভাই হিসাবেই দেন।
বলেই মিটি মিটি হাসছে, বুজলাম মজা করছে।
তাই আমিও মজা করার জন্য মানিব্যাগ ওর
হাতে দিয়ে বললাম যাই ইচ্ছা নে…..
নিরু সবগুলে টাকা বের করে আগে গুনে নিল।
তারপর ২০০ টাকা নিয়ে বাকিটা
মানিব্যাগে রেখে ফেরত দিল।
---কিরে মাত্র দুইশত টাকা নিলি।
---আরেকবার তুই বললে মাথা ফাটামু কিন্তু। আর
আমার হবু বরের কষ্টে উপার্জন করা টাকা নষ্ট করব
কেন হুম। থাকলে তো আমারি থাকবে।
এখন অফিসে যান।
---হুম যাচ্ছি তুই ক্লাসে যা।
---কী বললেন???
---না কিছু না যাও, ক্লাসে যাও।
---গুড বয়। সাবধানে যাবেন।
---তুমিও সাবধানে থেকো।
বলেই চলে এলাম, যাক মজা তাহলে ভালই হল।
কিছু দিন পরে
---এই তোরা আমার দরজার সামনে কেন, যা
এখান থেকে????
---আগে বল দুলাভাই বলব না ভাই বলব???
---যা ইচ্ছা বল, তবে এখন তোরা যা।
---আচ্ছা দুলাভাই বলি পরে ভাই বলবনে।
যাবতো তার আগে আমাদের পাওনা দেন।
---কিসের পাওনা??? তোদের আবার পাওনা
কিসের????
----এই যে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজালাম।
আমাদের পাওনা না দিয়েই বাসর ঘরে যাবেন
তা হবে না। আগে দিবেন তারপর ভেতরে
যাবেন।
---বল কি চাস???
---মাত্র পাঁচ দিলেই হবে।
---পাঁচ টাকা?? এই নে।
---ঐ আমরা কি ফকির নাকি যে পাঁচটাকা
নিব??? পাঁচ হাজার লাগবে।
বলে কি এগুলো। পাঁচ হাজার টাকা দিতে
হবে। আর দুলাভাই না ভাই বলবে এই কথা বলছে
কারন। আমার দিক থেকে ধরলে ভাই হয়। কিন্তু
নিরুর দিক থেকে ধরলে তো দুলাভাই। এদের
মাথায় এই বুদ্ধি দিল কে। পিচ্চি গুলোও এক
একটা চিজ…..
---কি বললি পাঁচ হাজার টাকা??? এক টাকাও
পাবিনা।
---তাইলে ভেতরেও যাওয়া হবে না। এই দেখ
দরজাই লক করা আর চাবি আমাদের হাতে।
কি আর করা অনেক কষ্টে তিন হাজারে
এসেছে, তাই দিয়েই ঘরে ঢুকলাম।
ভেতরে যেতেই নিরু এসে পায়ে হাত দিয়ে
সালাম করতে গেলো।
---এই কি করছ???
---বাহরে সালাম করছি।
---আরে তোমার স্থান এই বুকে পায়ে নয়। এখন
থেকে এইবুকই তোমার স্থান। এখন চল অযু করে
আসি। নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া
আদায়করে নতুন জীবন শুরু করি।
---হুম চলেন।
---এই অনেক আপনি হয়েছে। এখন থেকে তুমি
করে বলবা॥
---চেষ্টা করব।
দুজনে অযু করে দুরাকাত নফল নামাজ পরে
আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম।
নামাজ শেষ করে এসে দুজন খাটে বসলাম পাশা
পাশি। কিছুখন কেও কোন কথাই বলতে পারি
নি……
হঠাৎ আবুলের মতন বলে ফেললাম অনেক রাত
হয়ছে চলো শুয়ে পরি।
বলেই জিহ্বাতে কামড় দিলাম, কি বলতে কী
বললাম। আল্লাহই জানে এখন নিরু কী বলে।
আমাকে তেমন কিছুই না বলে মাথা নাড়িয়ে
সম্মতি দিল।
একটা বালিশে আমি শুলাম, পাশে নিরু শুবে,
কিন্তু সে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে
পড়ল।
আমিও কিছু বললাম না…..
কিছুখন পরে আমিই বললাম….
---এই তুমি এত সহজে সব মেনে নিলে???
---কেন নিবনা, আর আমাকে যার নিজের
মেয়ের মতন মানুষ করল তারা কিছু চাইল আর আমি
কিভাবে না বলি। যে কোন মেয়েই তোমার
মতন স্বামী পেতে চাইবে। সহজ সরল বোকা
টাইপের আনরোমান্টিক যদিও, ওসব আমি ঠিক
করে নিব…..
--- কী করব কোন দিন কারো প্রতি তো নজর
পড়েনি, ভাবতাম যা করার বউয়ের সাথেই করব….
এখন তুমি আসছ তুমিই সব দেখবে….. তবে তোমার
একটা কথা আজ কিন্তু ঠিক বলেই প্রমানিত
হলো….
---কোন কথাটা????
---ঐযে বলছিলা, আমার পেত্নীর মতন বউ হবে।
আজ দেখ ঠিকই একটা পেত্নী আমার বুকের উপর
শুয়ে আছে…..
---কী বললে আমি পেত্নী???
শাথে কিল ঘুষি চলছেই বুকের উপর।
---আরে তুমি পেত্নী হবে কেন, পেত্নী তো
আমার বউ।
---তাহলে আমি কে???
---সত্যিই তো তুমি কে?????
---ফাজলামো হচ্ছে না????
---ও তুমিই তো আমার একমাত্র বউ।
---তাহলে কি হল???
---আরে না আমার বউটা খুব সুন্দর আর মিষ্টি।
একটা কিউটের ড্রাম।
---হুম মনে যেন থাকে। অন্য কারো দিকে নজর
দিলে একদম চোখ উপড়ে ফেলব বুঝলেন মসাই????
---অবশ্যই থাকবে। এখন ঘুমাও।
---শক্ত করে জরিয়ে ধর।
---এই ধরলাম।
গল্পঃ নীল শাড়ি
.# writter__Dipu
.
.
ইমন:--আজ একটা শাড়ি পরতো নাহার।
নাহার:--কেন?
ইমন:--আমি দেখব বলে।
নাহার:--ও,
ইমন:--ও কি?
নাহার:--কিছুনা।
ইমন:--তার মানে পরবানা শাড়ি?
নাহার:--আমার নীল শাড়ি নেই।
ইমন:--আন্টির একটা পরো।
নাহার:--আন্টি কে??
ইমন:--তোমার আম্মু।
নাহার:--আমার আম্মু তোমার আন্টি??
কয়বার বলছিলাম আমার আম্মুকে আন্টি ডাকবানা??
ইমন:--সরি,আম্মু।
নাহার:--আর যেন ভুল না হয়।
ইমন:--হবেনা।এবার আম্মুর একটা সুন্দর
শাড়ি পরে বেলকুনিতে দাঁড়াও।
নাহার:--ব্যালকুনিতে কেন??
ইমন:--আমি দেখবো তাই।
তুমি তাড়াতাড়ি করতো প্লিজ।
আমি এক্ষুনি তোমার বাসার সামনে আসছি।
অনিচ্ছা সত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো নাহারকে।
মায়ের কাছে কি করে শাড়ি চাইবে এখন
নাহার ভেবে পাচ্ছেনা।সামনে পরীক্ষা।
রাতে অনেক পড়া।এখন না ঘুমিয়ে শাড়ি পরে
ঢং করবো জানলেই মা বকা দেবে।
ওহ!!ইমনটা যে কি বুঝিনা।
এসময় কেউ এমন বায়না ধরে??
লুকিয়ে মায়ের অগোছরে একটা কচি
কলাপাতার রঙের শাড়ি নিয়ে নিলো নাহার।
নিজের রুমে এসে শাড়িটা খুব তাড়াতাড়ি করে পরে নিলো।
কপালে টিপ দেয়া নাহার পছন্দ করেনা।
তাছাড়া এখন আটা ময়দা মাখারো সময় নেই
নাহারের হাতে।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো নাহহার।
ইমনকে কল দিলো।কিন্তু ইমন রিসিভ করছেনা।
নাহারের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।৬বার কল দেয়ার পর
ইমন রিসিভ করে বললো,
ইমন:--দিলে তো সব পন্ড করে?
নাহার:--কি পন্ড করলাম??
ইমন:--দেখা,
নাহার:--কি দেখা??
এতক্ষণ কল রিসিভ করলেনা কেন??
ইমন:--আমি একটা ডানাকাটা পরীকে মুগ্ধ হয়ে
দেখছিলাম।ঠিক সেই সময় কল করলে তুমি।
নাহার:--আমাকে শাড়ি পরতে বলে কোথায়কার
কোন ডানাকাটা পরী দেখছ তুমি??
ইমন:--কোথায়কার আবার?আমার মনের পরীকে!
নাহার:--রাখছি,বাই।
ইমন:--এই এই রাখবানা,নিচের দিকে তাকাও।
নাহারদের বাসা দুই তলায়।
নাহার নিচে তাকিয়ে দেখলো ইমন রাস্তায়
একটা গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নাহারের দিকে তাকিয়ে ইমন মিটমিট করে হাসছে।
ইমন বললো:--শাড়ি পরলে কোনো মেয়েকে
এত সুন্দর লাগে??আগে জানতামনা তো।
নাহার:--হয়েছে আর ড্রামা করতে হবেনা।
রাতে অনেক পড়া আছে।তুমি চলে যাও।আমি রাখছি।
ইমন:--রাখবা তো জানি।তোমাদের বাসার
দারওয়ানের কাছে একটা প্যাকেট দিয়েছি।ওটা নিয়ে নিও।
নাহার লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে দারওয়ানের কাছে গেল।
দারওয়ান একগাল হেসে বললো,
আপামণি ইমন ভাই আইছিলো।
এই নেন,প্যাকেটটা দিয়া গেছে।
নাহার প্যাকেটটা নিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।
এদিকওদিক তাকিয়ে রুমের দরজা লক করে
প্যাকেটটা খুললো।ভেতরে একটা রঙিন বক্স।
বক্সের উপরে লেখা,""Happy Anniversary nahar janu""
চট করে নাহারের মনে হলো আজ তো
ওদের সম্পর্কের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
এই দিনে ইমন ওকে প্রপোজ করেছিলো।
নাহার মনে মনে অনুতপ্ত হলো।
ইশ!!পরীক্ষার চিন্তায়,
পড়ার চাপে অন্যসব ভুলেই গেলাম।
বক্সটা খুলে দেখলো নাহার।
ভেতরে একটা নীল শাড়ি,
এক ডজন নীল কাঁচের চুড়ি।
নাহারের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুঁটলো।
একটা নীল শাড়ির বড্ড শখ নাহারের।
কিনবে কিনবে করেও সময়ের অভাবে কেনা হয়না।
মনে মনে বললো,আমি ভুলে গেছি তাতে কি?
ওতো মনে রেখেছে।
আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে মনে করিয়ে দিলো।
ভালোবাসি ইমন।অনেক ভালোবাসি তোমাকে.....