# প্রতিদান
রাত আটটা বাজে।
আমি আমার শোবার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। যদিও কাগজে কলমে এখনো শীতকাল, তারপরেও যথেষ্ট গরম পড়েছে। ফ্যান ছাড়লে লাগে ঠান্ডা, আবার বন্ধ করলে গরম।
বেশ বিব্রতকর একটা অবস্থা।
কয়েকবার খাট থেকে উঠে ফ্যান ছেড়ে আবার বন্ধ করেছি।
ব্যাপারটা এখন বেশ বিরক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
এখন ফ্যান বন্ধ করে, সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বসে আছি। দেখি কি হয়!
এই ‘কি হয়’ ব্যাপারটা দেখতে গিয়ে এবার আরেক ঝামেলা পাকালাম। কোথা থেকে যেন একগাদা মশা এসে জুটেছে।
ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়া থাকলে, এরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা। তবে ফ্যান বন্ধ করা মাত্রই এরা ‘ঈদ মোবারক’ বলে ক্রমাগত কামড়াতে থাকে।
এ কামড় শুধু অল্পতেই থাকেনা। এর রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ। বেশ বিচ্ছিরি রকমের রেশ!
কামড়ানোর যায়গাটা সমানে চুলকায়।
আরাম করে চুলকাচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে।
এরই মাঝে এশার আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসলো। নামাযে যাবো।
পাশের মসজিদে তবলীগ জামাত এসেছে। নামাযের শেষে খানিকক্ষণ মুসল্লীদের সাথে কাটানোর ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে আছে এদের সাথেই চিল্লায় যাওয়ার।
এই ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগেও মনের শান্তির একমাত্র জায়গা হিসাবে মসজিদের বিকল্প আমি পাইনা। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা বা ইবাদতের চেয়ে শান্তির আর কি ই বা থাকতে পারে!
এই মসজিদটা দুইতলায় । নিচলায় স্থানীয় থানা আর দ্বিতীয় তলায় মসজিদ।
সেই রাতে থানায় একটা লাশ আসে । বেওয়ারিশ রোড এক্সিডেন্টের লাশ। প্রায় দুইদিন হয়ে গেলেও কেউ আসেনি লাশটার খোজ নিতে।
পোষ্টমর্টেম শেষে হাসপাতাল থেকে বার বার চাপ দেয়া হচ্ছিলো, লাশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।
এভাবে তো লাশ ফেলে রাখা যায় না, তাই জামাতের যে আমির থাকেন, তিনি পুলিশকে অনুরোধ করে বলেন, চলুন লাশটাকে আমরা গোসল দেই আর জানাযা পড়িয়ে কবর দেই।
পুলিশও মনে হয় এ কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
আমির সাহেব, আমাকে আর দুইজনকে নিয়ে লাশটাকে ঠিক মতো গোসল করিয়ে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন দিলেন।
কাজটা করতে পেরে আমাদের অনেক অনেক ভালো লাগছিলো।
এর কিছুদিন পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাবলীগের লোকজন, অন্য মসজিদে চিল্লায় চলে যায়। কলেজ বন্ধ, তাই আমিও চললাম তাদের সাথে।
আমরা যে মসজিদে গিয়েছিলাম, সেটা এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে। সেই মসজিদ থেকে বাজার বেশ দূরে ছিলো। বাজারে যেতে হলো কম হলেও ঘন্টা তিনেক সময় লাগে।
পথে একটা ছোট নদী পার হয়ে পরে আবার ভ্যান গাড়ি করে যাওয়া লাগে। অনেক অনেক গহীন এক গ্রাম।
এমনই এক রাতের বেলা জামাতের আমির সাহেবের শরীর হঠাৎ বেশ খারাপ হয়ে যায়। অবস্থা ধীরে ধীরে বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।
শ্বাসকষ্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করায়, তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। সবাই বুঝছিলো দ্রুত ব্যাবস্থা না নিলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো যাবে না।
তবে এত রাতে এখানে ডাক্তার বা ভ্যান গাড়ি কোথায় পাবে? আর পাওয়া গেলেও হয়তো সেটা আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে।
মুরুব্বীরা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
ওদের মধ্য থেকে আমি, আমার ভাই নিসারকে সাথে নিয়ে বের হলাম ভ্যান খুঁজতে। কেননা নিসার অন্যদের তুলনায় ছিলো দারুন সাহসী। যা থাকে কপালে, আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা বের হলাম।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাছাড়া বেশ ঠান্ডা। শীতের কাপড়েও ঠান্ডা কাটছে না।
আশপাশের গাছপালাগুলোও কেমন যেন ঝিম মেরে রয়েছে। অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর নিজেদের পায়ের খশখশ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের চিন্তা হলো একেতো এতো রাত, তার উপর ঠান্ডার জন্য ভ্যান তো পাওয়া যাবে না। তাছাড়া এ গ্রামে কার বাড়িতে ভ্যান আছে সেটাও আমরা জানি না।
একথা বলতে বলতে ফিরে যাব কিনা সেটাও ভাবছিলাম দুজন।
এমন সময় কিছু দুরে স্থানীয় একটা দোকানের পাশে একটা ভ্যান দেখতে পেলাম।
ভ্যান্ টা দাড়িয়ে আছে। ভ্যানের দেখা পেয়ে বেশ খুশী খুশী লাগছিলো, তবে কাছেধারে ভ্যান চালক কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
গ্রামের এই দিকটায় ঠান্ডার মাত্রাটা মনে হয় একটু বেশী। রীতিমত কাঁপুনি ধরে যায়।
কেউ আছেন? বলে ডাক দিলাম আমরা। আমাদের ডাক শুনেই মনে হয় দোকানের পিছন দিকের একটা অন্ধকার ঝোপের কাছ থেকে একজন উঠে এলেন।
লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। পুরো শরীর ঢাকা ছিলো চাদর দিয়ে ।
উনার মুখ ও তাই দেখা যাচ্ছিলো না। আমাদের কথা শুনে লোকটা শুধু বললো, চলুন।
আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতেই খেয়াল করলাম বাজার চলে এসেছে। আর কি আশ্চর্য এত দ্রুত বাজারে চলে এলাম! তাছাড়া এত রাতেও এই বাজারের প্রায় সব দোকানই খোলা।
আশে পাশে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সবারই উচ্চতা প্রায় ছয় ফিটের উপরে হবে।
ভ্যান চালক আমাদের ভ্যানেই বসতে বলে, ঔষধের দোকান থেকে একটা ঔষধ নিয়ে আসলেন।
ঔষধটা আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, ভ্যানে শক্ত করে বসতে। অন্ধকারে ভ্যান চলছে। ভ্যানের গতিও বেশ।
এই আঁধারে কোন আলো না জ্বালিয়ে যেখানে রাস্তা দ্যাখাই মুশকিল, সেখানে সে কিভাবে ভ্যান চালাচ্ছে, আশ্চর্য ব্যাপার!
আমরা আর কিছু চিন্তা করতে পারলাম না।
হঠাৎ ভ্যান থেমে গেলো।
ভ্যান চালক, আমাদের বললো, দ্রুত এই ঔষধটা রোগীকে খাইয়ে দিন।
আর আগামীকাল সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, আশা করি আল্লাহর রহমতে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ঔষধ নিয়ে আমার সাথে থাকা নিসার দ্রুত মসজিদে চলে গেলো।
আমি ভাবছি অন্য কথা, যেখানে বাজারে যেতে আমাদের একটা নদী পার হওয়া লাগে, সেখানে এতো জলদি কিভাবে আমরা আসলাম? কাছাকাছি এত সুন্দর বাজার থাকতে আমরা তাহলে শুধুশুধুই এত কষ্ট করতাম এতদিন?
আমি যখন ভ্যান চালককে ভাড়া দিতে গেলাম, তখন লোকটা ভাড়া নিতে চাইলো না।
লোকটা ভ্যান ঘুড়িয়ে শুধু বললেন,
'আপনারা আমার জন্য যা করেছেন সেটা কয়জন করে? আমি কোন ভাড়া নিবো না ভাই। আল্লাহ হাফিজ' বলে লোকটা যখন মুখ ফিরিয়ে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন মসজিদের কেরোসিনের হ্যারিকেনের হালকা আলোয় চেহারাটা দেখলাম।
কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো।
কোথায় যেন দেখেছি। ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।
দ্বিধান্বিত চিন্তায় মসজিদে ঢুকছি, হঠাৎ মনে পড়লো, আরে এই লোকতো সেই লোক, যার গোসল দিয়ে, জানাজার নামাজ আমরা পড়িয়েছিলাম।
এক ঝটকায় পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই।
না ভ্যান, না কোন মানুষ!
লেখাঃ তৌফিক মিথুন
রাত আটটা বাজে।
আমি আমার শোবার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে বসে আছি। যদিও কাগজে কলমে এখনো শীতকাল, তারপরেও যথেষ্ট গরম পড়েছে। ফ্যান ছাড়লে লাগে ঠান্ডা, আবার বন্ধ করলে গরম।
বেশ বিব্রতকর একটা অবস্থা।
কয়েকবার খাট থেকে উঠে ফ্যান ছেড়ে আবার বন্ধ করেছি।
ব্যাপারটা এখন বেশ বিরক্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
এখন ফ্যান বন্ধ করে, সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বসে আছি। দেখি কি হয়!
এই ‘কি হয়’ ব্যাপারটা দেখতে গিয়ে এবার আরেক ঝামেলা পাকালাম। কোথা থেকে যেন একগাদা মশা এসে জুটেছে।
ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়া থাকলে, এরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা। তবে ফ্যান বন্ধ করা মাত্রই এরা ‘ঈদ মোবারক’ বলে ক্রমাগত কামড়াতে থাকে।
এ কামড় শুধু অল্পতেই থাকেনা। এর রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ। বেশ বিচ্ছিরি রকমের রেশ!
কামড়ানোর যায়গাটা সমানে চুলকায়।
আরাম করে চুলকাচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে।
এরই মাঝে এশার আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসলো। নামাযে যাবো।
পাশের মসজিদে তবলীগ জামাত এসেছে। নামাযের শেষে খানিকক্ষণ মুসল্লীদের সাথে কাটানোর ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে আছে এদের সাথেই চিল্লায় যাওয়ার।
এই ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগেও মনের শান্তির একমাত্র জায়গা হিসাবে মসজিদের বিকল্প আমি পাইনা। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা বা ইবাদতের চেয়ে শান্তির আর কি ই বা থাকতে পারে!
এই মসজিদটা দুইতলায় । নিচলায় স্থানীয় থানা আর দ্বিতীয় তলায় মসজিদ।
সেই রাতে থানায় একটা লাশ আসে । বেওয়ারিশ রোড এক্সিডেন্টের লাশ। প্রায় দুইদিন হয়ে গেলেও কেউ আসেনি লাশটার খোজ নিতে।
পোষ্টমর্টেম শেষে হাসপাতাল থেকে বার বার চাপ দেয়া হচ্ছিলো, লাশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।
এভাবে তো লাশ ফেলে রাখা যায় না, তাই জামাতের যে আমির থাকেন, তিনি পুলিশকে অনুরোধ করে বলেন, চলুন লাশটাকে আমরা গোসল দেই আর জানাযা পড়িয়ে কবর দেই।
পুলিশও মনে হয় এ কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
আমির সাহেব, আমাকে আর দুইজনকে নিয়ে লাশটাকে ঠিক মতো গোসল করিয়ে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন দিলেন।
কাজটা করতে পেরে আমাদের অনেক অনেক ভালো লাগছিলো।
এর কিছুদিন পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাবলীগের লোকজন, অন্য মসজিদে চিল্লায় চলে যায়। কলেজ বন্ধ, তাই আমিও চললাম তাদের সাথে।
আমরা যে মসজিদে গিয়েছিলাম, সেটা এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে। সেই মসজিদ থেকে বাজার বেশ দূরে ছিলো। বাজারে যেতে হলো কম হলেও ঘন্টা তিনেক সময় লাগে।
পথে একটা ছোট নদী পার হয়ে পরে আবার ভ্যান গাড়ি করে যাওয়া লাগে। অনেক অনেক গহীন এক গ্রাম।
এমনই এক রাতের বেলা জামাতের আমির সাহেবের শরীর হঠাৎ বেশ খারাপ হয়ে যায়। অবস্থা ধীরে ধীরে বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।
শ্বাসকষ্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করায়, তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। সবাই বুঝছিলো দ্রুত ব্যাবস্থা না নিলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো যাবে না।
তবে এত রাতে এখানে ডাক্তার বা ভ্যান গাড়ি কোথায় পাবে? আর পাওয়া গেলেও হয়তো সেটা আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে।
মুরুব্বীরা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
ওদের মধ্য থেকে আমি, আমার ভাই নিসারকে সাথে নিয়ে বের হলাম ভ্যান খুঁজতে। কেননা নিসার অন্যদের তুলনায় ছিলো দারুন সাহসী। যা থাকে কপালে, আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা বের হলাম।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাছাড়া বেশ ঠান্ডা। শীতের কাপড়েও ঠান্ডা কাটছে না।
আশপাশের গাছপালাগুলোও কেমন যেন ঝিম মেরে রয়েছে। অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর নিজেদের পায়ের খশখশ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের চিন্তা হলো একেতো এতো রাত, তার উপর ঠান্ডার জন্য ভ্যান তো পাওয়া যাবে না। তাছাড়া এ গ্রামে কার বাড়িতে ভ্যান আছে সেটাও আমরা জানি না।
একথা বলতে বলতে ফিরে যাব কিনা সেটাও ভাবছিলাম দুজন।
এমন সময় কিছু দুরে স্থানীয় একটা দোকানের পাশে একটা ভ্যান দেখতে পেলাম।
ভ্যান্ টা দাড়িয়ে আছে। ভ্যানের দেখা পেয়ে বেশ খুশী খুশী লাগছিলো, তবে কাছেধারে ভ্যান চালক কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
গ্রামের এই দিকটায় ঠান্ডার মাত্রাটা মনে হয় একটু বেশী। রীতিমত কাঁপুনি ধরে যায়।
কেউ আছেন? বলে ডাক দিলাম আমরা। আমাদের ডাক শুনেই মনে হয় দোকানের পিছন দিকের একটা অন্ধকার ঝোপের কাছ থেকে একজন উঠে এলেন।
লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। পুরো শরীর ঢাকা ছিলো চাদর দিয়ে ।
উনার মুখ ও তাই দেখা যাচ্ছিলো না। আমাদের কথা শুনে লোকটা শুধু বললো, চলুন।
আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতেই খেয়াল করলাম বাজার চলে এসেছে। আর কি আশ্চর্য এত দ্রুত বাজারে চলে এলাম! তাছাড়া এত রাতেও এই বাজারের প্রায় সব দোকানই খোলা।
আশে পাশে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সবারই উচ্চতা প্রায় ছয় ফিটের উপরে হবে।
ভ্যান চালক আমাদের ভ্যানেই বসতে বলে, ঔষধের দোকান থেকে একটা ঔষধ নিয়ে আসলেন।
ঔষধটা আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, ভ্যানে শক্ত করে বসতে। অন্ধকারে ভ্যান চলছে। ভ্যানের গতিও বেশ।
এই আঁধারে কোন আলো না জ্বালিয়ে যেখানে রাস্তা দ্যাখাই মুশকিল, সেখানে সে কিভাবে ভ্যান চালাচ্ছে, আশ্চর্য ব্যাপার!
আমরা আর কিছু চিন্তা করতে পারলাম না।
হঠাৎ ভ্যান থেমে গেলো।
ভ্যান চালক, আমাদের বললো, দ্রুত এই ঔষধটা রোগীকে খাইয়ে দিন।
আর আগামীকাল সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, আশা করি আল্লাহর রহমতে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ঔষধ নিয়ে আমার সাথে থাকা নিসার দ্রুত মসজিদে চলে গেলো।
আমি ভাবছি অন্য কথা, যেখানে বাজারে যেতে আমাদের একটা নদী পার হওয়া লাগে, সেখানে এতো জলদি কিভাবে আমরা আসলাম? কাছাকাছি এত সুন্দর বাজার থাকতে আমরা তাহলে শুধুশুধুই এত কষ্ট করতাম এতদিন?
আমি যখন ভ্যান চালককে ভাড়া দিতে গেলাম, তখন লোকটা ভাড়া নিতে চাইলো না।
লোকটা ভ্যান ঘুড়িয়ে শুধু বললেন,
'আপনারা আমার জন্য যা করেছেন সেটা কয়জন করে? আমি কোন ভাড়া নিবো না ভাই। আল্লাহ হাফিজ' বলে লোকটা যখন মুখ ফিরিয়ে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন মসজিদের কেরোসিনের হ্যারিকেনের হালকা আলোয় চেহারাটা দেখলাম।
কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো।
কোথায় যেন দেখেছি। ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।
দ্বিধান্বিত চিন্তায় মসজিদে ঢুকছি, হঠাৎ মনে পড়লো, আরে এই লোকতো সেই লোক, যার গোসল দিয়ে, জানাজার নামাজ আমরা পড়িয়েছিলাম।
এক ঝটকায় পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই।
না ভ্যান, না কোন মানুষ!
লেখাঃ তৌফিক মিথুন